শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৫ অপরাহ্ন
ধারাবাহিক সারাদেশ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
পর্ব – ১
বাংলাদেশের মানচিত্রের মাথায় , জেলাটির নাম পঞ্চগড়। যার অলংকারিক নাম হিমালয় কন্যা। এই জেলার সদর উপজেলা এবং বোদা উপজেলার দুইটি স্থানের নাম ঝলই হাট এবং নয়নীব্রুজ। এখানে জনপ্রতিনিধীদের এবং প্রশাসনের উদাসীনতা, অবহেলা ও যোগসাজসে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে এক ভয়ংকর সন্ত্রাসী ও মাদক চক্র। ২০০৭ সালের ভূমিদস্যুতার একটি মামলার সূত্র ধরে আমাদের টিম পৌছে যায় , বোদা থানার ঝলই শালসিড়ি ইউনিয়নে । আমাদের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে সেই সন্ত্রাসী এবং মাদক চক্রের সন্ত্রাসের পরিপূর্ণ একটি চিত্র। এই চক্রটি যার নেতৃত্বে চলে তার নাম মাহাবুব আলম ওরফে কথিত বোয়ালু মাহাবুব। এই বোয়ালু নামের স্থানীয় অর্থ সর্বভূক মাছ জাতীয় প্রানী ( অনেকটা বোয়াল মাছ বিশেষ )। মূলত এখন ভয়ংকর সন্ত্রাসী বনে গেলেও ,এক সময় মাহাবুব চিটিংও চুরি ছেচরামু করেই জিবীকা নির্বহ করত বলে মুখে মুখে প্রচলিত আছে । তার টাউটারী কর্মকান্ডের অনেক সময় ভাগ না পেয়ে , এলাকার অন্য সহযোগী সন্ত্রাসীরা তার নাম দেয় ; “বোয়ালু মাহাবুব “। কারণ তার টাউটারীর উপার্জনে অর্থ বেশীরভাগ সময় অন্য কাউকে ভাগ না দিয়ে একাই ভোগ করত সে।
আর যার ফলশ্রতিতে তার এই বোয়ালু নামেই গড়ে উঠেছে বোয়ালু মাহাবুব বাহিনী। ২০০৭ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের শশ্মানের দখল নিয়ে আলোচনায় আসে সে। জানা যায় , সেই সম্পত্তি যবর দখল করে একটি পোল্ট্রি ফার্মের কাছে ভূয়া দলিলের মাধ্যমে বিক্রি করে এবং পোল্ট্রি মালিকের পক্ষে দখলে নামে এই বোয়ালু বাহিনী। সেই সময় ওই সম্পত্তি উদ্ধারে এসিল্যান্ড এলে তাকে পিটিয়ে আহত করে তার বাহিনী। এইভাবে তাদের অত্যাচারে অভিযোগে অতিষ্ঠ হয়ে ; সেই সময় পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার হারুনূর রশীদ মাইকে ঘোষণা করেন যে, এই বাহিনীর সকল সদস্যদের ধরে সাড়ে তিন হাত লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাঁর কাছে নিয়ে যেতে। বর্তমান রেলমন্ত্রী মহদয় ও পঞ্চগড়-২ আসনের এমপি জনাব নূরুল ইসলাম সূজন সে বিষয়টি অবহিত আছেন বলেই জানা গেছে ।
এস পি সাহেব কেন আইনের বায়রে জনস্বার্থে এমন আদেশ দিয়েছিলেন সেই সূত্রেই আমাদের অনুসন্ধান এবং এই বাহিনীকে অনূসরন শুরু করা। আশ্চর্য্য হলেও সত্য যে থানায় এই অপরাধী চক্রের বাস , সেখানে তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। আমাদের টিমের মধ্যেই প্রশ্ন জাগে ; কেন কথিত বোয়ালু এবং তার বাহিনীর বিরুদ্ধে পুলিশের নথীতে উল্লেখযোগ্য কোন মামলা নেই। সরজমিনে পরিস্থিতি বুঝতে অসুবিধা হয়নি আমাদের। দরিদ্রপিড়িত অঞ্চলের মানুষগুলো কোথায় মামলা করবে ? পুলিশ প্রশাসনের মধ্যেই যখন গলদ। ভূক্তভূগিরা আদালতে মামলা করেও কি এলাকায় ফিরতে পারবে ? এমন শিক্ষা পেয়েছে তো দুই/চারজন আগেই। তবে কি এই বাহিনীর ক্ষমতার কাছে প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরা ছিল অসহায়। নাকি কোন ম্যানেজ কৌশলে পুরো প্রশাসনকে হাতের তালুতে নিয়ে বোয়ালু বাহিনী ত্রাস করেছিল ।আমরা খোজ নিয়ে জানতে পারি , ঐ ত্রাসের বাহিনীটি নাকি এখন অরো সুসংগঠিত হয়েছে। এখন তাদের সাথে যোগ হয়েছে রাজনৌতিক পরিচয়। ফলে এখন তাদের বা কি অবস্থা , জানতেই এই পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা আমাদের। টিমের সবায় ছুটলাম পঞ্চগড়ের সেই দূদর্শ বোয়ালু মাহাবুব বাহিনীর সন্ধানে।
কাঁচা এড়ো থেবড়ো রাস্তা কোথাও বা পাকা আমাদের অনুসন্ধানী টিম গিয়ে থামল নয়নীব্রুজে। চোখে পড়ল একটি উচু মাটির ঢিবি।ব্রুজ শব্দের অর্থ উঁচু ঢিবি বিশেষ। এই মাটির ঢিবির পাশেই কয়েকটি পুকুর। পুকুরের নাম নয়নী।সেই মাটির ঢিবি এবং পুকুরের নামেই এই গ্রাম বলে জানা যায়। উঁচু মাটির ঢিবিটি নাকি তদানিংতন কোন রাজ প্রহরীদের পাহাড়া চৌকি বিশেষ স্মৃতি বহন করছে। যদিও তার সততা নিয়ে প্রশ্ন আছে।কেউবা বলছে বজ্রপাতের প্রতিরোধক স্তম্ভ এই ব্রুজ। যদিও চোরদের কথিত ম্যাগনেট খোরাখুড়িতে নুইয়ে পড়েছে তার মাথা। লোকালয় থেকে একটু দূরে এই ঢিবির পুকুরগুলোই মাদক স্পট বলে জানা গেল। পাশেই চোখে পড়ল বোয়ালু মাহাবুবদের বাড়ীঘর। প্রকাশ্যে আয়ের উৎস না থাকলেও তাদের কারোরই অভাব নেই এখন । সবার বাড়ী-ঘর পাকা ও ফার্নিচার আধুনিক।
আমাদের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে, বর্তমানে বোয়ালু বাহিনী প্রধান সন্ত্রাসী মাহাবুব সরকারী দলের ছত্র ছায়ার আগের মতই সন্ত্রাস করে যাচ্ছে।ইতিমধ্যে তার গায়ে সরকারীদল আওয়ামীলীগের পরিচয় লেগেছে। সে এখন ঝলই শালসিড়ি ইউনিয়নের একটি ব্লকের সভাপতি। তা হতে খুব বেশী অসুবিধা হয়নি তার। যেহেতু অন্য প্রার্থীদের রাতের আধারে ভয় দেখিয়ে দাবিয়ে দেওয়া হয়েছে।কেউ কেউ আবার বোয়ালু সভাপতি প্রার্থী হওয়ায়, নিজ থেকেই ভয়ে সড়ে গেছে।”বোয়ালু মাহাবুবের” রাজনীতিতে আসার সুযোগ হয়েছে মূলত জেলা আওয়ামী লীগের দুইটি বিবাদমান পক্ষ-বিপক্ষের কারণে। সে এখন এক পক্ষের বড় ক্যাডার এবং ম্যাসেলম্যান। তাই তার দলীয় পরিচয় পেতে অসুবিধা হয়নি।
চলবে –
(বিঃ দ্রঃ- প্রতিবেদন পরবর্তিতে আসছে ভিডিও ডকুমেন্টারী )